আল কুরআনের মু'জিযা

নবম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - ইসলাম শিক্ষা - Islamic Study - কুরআন ও হাদিস শিক্ষা | NCTB BOOK

আল কুরআনের মু'জিযা

আল্লাহ তা'আলা যুগে যুগে মানবজাতিকে সঠিক পথের সন্ধান এবং তাঁর বিশেষ ক্ষমতা প্রকাশের জন্য অসংখ্য নবি-রাসুলকে মু'জিযা দিয়ে প্রেরণ করেন। মু'জিযা আরবি শব্দ। এর অর্থ-অলৌকিক বা বিশেষ ক্ষমতা, অন্যকে অক্ষম করে দেওয়া। মহাগ্রন্থ আল কুরআন প্রিয়নবি হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর সবচেয়ে বড় মু'জিযা। প্রত্যেক নবির গোত্রের অবস্থা অনুপাতেই তার মু'জিযা হয়ে থাকে। ফির'আউন সম্প্রদায়ের মধ্যে যাদু বিদ্যার ব্যাপক প্রচলন ছিল। তাই মুসা (আ.)-কে আল্লাহ তা'আলা একটি লাঠি দিয়ে পাঠালেন, যা যাদুকরদের সাপ সদৃশ সব লাঠি গিলে ফেলল। এতে যাদুকররা বিস্মিত হলো। তারা বিশ্বাস করে নিলো যে, মুসা (আ.) যা নিয়ে এসেছেন, তা সত্য-সঠিক; যাদু নয়।

হযরত ঈসা (আ.)-এর যুগে মানুষ যখন চিকিৎসাশাস্ত্রে ব্যাপক উন্নতি লাভ করেছিল, তখন আল্লাহ তা'আলা তাকে এমন মুজিযা দিয়ে পাঠালেন, যা দেখে সে যুগের চিকিৎসকগণ বিস্মিত হয়ে গেলেন। তিনি মৃতদের আল্লাহর হুকুমে জীবিত করতেন এবং জটিল ও কঠিন রোগ ভালো করতেন। যেমন, তিনি জন্মান্ধ ও কুষ্ঠরোগীকে সুস্থ করতে পারতেন এবং মাটি দিয়ে পাখির আকৃতি বানিয়ে তাতে আল্লাহর নামে ফুঁ দিলেই তা পাখি হয়ে যেত। এতে চিকিৎসকদের বিবেক-বুদ্ধি স্বীকার করে নিল যে, এগুলো আল্লাহ তা'আলার পক্ষ হতেই।

আল্লাহ তা'আলা সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবি মুহাম্মাদ (সা.)-কে আরব জাতির নিকট প্রেরণ করেন। আরবরা বিশুদ্ধ আরবি ভাষায় পারদর্শী ছিল। আরবি ভাষা চর্চার মাধ্যমে সাহিত্যের ক্ষেত্রে উচ্চশিখরে আরোহণ করেছিল। বাকপটুতা ও উচ্চাঙ্গের সাহিত্যিক মান দিয়ে ভাষণ-বক্তৃতা দিত। তারা বর্তমান যুগের মতো ভাষাচর্চার বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রতিযোগিতা করত এবং বিজয়ীদের বিশেষ সম্মান দিত ও পুরস্কৃত করত। এ সময় আল্লাহ তা'আলা মুহাম্মাদ (সা.)-এর প্রতি সর্বোৎকৃষ্ট আরবি সাহিত্য শেষ আসমানি গ্রন্থ আল-কুরআন নাযিল করেন। আল-কুরআনের ভাষাশৈলী দেখে কাফির-মুশরিকরা এর তাৎপর্য অনুধাবন করলেও সাধারণ মানুষের কাছে অপপ্রচার চালাতে লাগল যে, মুহাম্মাদ (সা.) যাদুকর। তাঁর কাছে গেলে কুরআনের মাধ্যমে সে মানুষদের মোহগ্রস্ত করে ফেলবে। তারা মানুষের কাছে অপপ্রচার করলেও নিজেরা কুরআনের ভাষার অলংকার, বর্ণনা ভঙ্গি ও বাক্য গঠন প্রণালি অনুধাবন করে লুকিয়ে লুকিয়ে রাতের আঁধারে তা শোনার জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ঘরের আশেপাশে অবস্থান করত। আবার দিনের বেলায় তারা প্রচার করত যে, আমরাও কুরআনের মতো আয়াত রচনা করতে পারি। তাদের এমন উক্তির পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তা'আলা তাদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন,

وَإِن كُنْتُمْ فِي رَيْبٍ مِّمَّا نَزَّلْنَا عَلَى عَبْدِنَا فَأْتُوا بِسُورَةٍ مِّنْ مِّثْلِهِ وَادْعُوا شُهَدَاءَكُمْ مِّنْ دُونِ اللَّهِ إِنْ كُنْتُمْ صَدِقِينَ . فَإِن لَّمْ تَفْعَلُوا وَلَنْ تَفْعَلُوا فَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِي وَقُوْدُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ أُعِدَّتْ لِلْكَفِرِينَ 

অর্থ: আর যে কিতাবটি আমি আমার বান্দার ওপর নাযিল করেছি, তাতে যদি তোমরা সন্দেহ পোষণ করো, তাহলে তার মতো একটি সূরা তৈরি করে আনো এবং আল্লাহকে ছাড়া নিজেদের সমস্ত সমর্থক গোষ্ঠীকে ডেকে আনো। তোমরা যদি সত্যবাদী হয়ে থাকো। কিন্তু তোমরা যদি এমনটি না করো আর নিঃসন্দেহে কখনোই তোমরা এটা করতে পারবে না, তাহলে ভয় করো সেই আগুনকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর যা তৈরি করে রাখা হয়েছে কাফিরদের জন্য। (সূরা আল বাকারা, আয়াত: ২৩-২৪)

আল্লাহ তা'আলা মানুষ ও জিনকে কুরআনের অনুরূপ একটি কিতাব অথবা কুরআনের সূরার অনুরূপ একটি সূরা রচনা করে নিয়ে আসার চ্যালেঞ্জ করেছেন। আজ পর্যন্ত কুরআনের চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। ভবিষ্যতেও ইসলামে অবিশ্বাসীরা কখনো কুরআনের অনুরূপ একটি কিতাব কিংবা কুরআনের সূরার মতো একটি সূরা রচনা করে আনতে পারবে না। আল্লাহ তা'আলা বলেছেন,

قُلْ لَبِنِ اجْتَمَعَتِ الْإِنْسُ وَالْجِنُّ عَلَى أَنْ يَأْتُوا بِمِثْلِ هَذَا الْقُرْآنِ لَا يَأْتُونَ بِمِثْلِهِ وَلَوْ كَانَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ ظَهِيرًا .

অর্থ: হে নবি আপনি বলুন, সমস্ত মানব ও জিন যদি এ কুরআনের অনুরূপ রচনা করার জন্য জড়ো হয় এবং তারা পরস্পরের সাহায্যকারী হয়; তবুও তারা কখনো এর অনুরূপ রচনা করে আনতে পারবে না। (সূরা বনি ইসরাঈল, আয়াত: ৮৮)

মানুষ যেহেতু কুরআনের অনুরূপ কালাম রচনা করতে পারেনি, তাই বুঝা যায় যে, কুরআন একটি চিরন্তন মু'জিযা। বিভিন্ন পদ্ধতিতেই কুরআনুল কারিমের মু'জিযা প্রমাণ করা যায়, কুরআনের শব্দমালা, গ্রন্থনা, অলংকারপূর্ণ শব্দের মাধ্যমে বিষয়বস্তুর প্রতি নির্দেশনা প্রদান, আদেশ-নিষেধ, আল্লাহ তা'আলার অতি সুন্দর নাম ও সুউচ্চ গুণাবলির সংবাদ প্রদান, তার ফেরেশতাদের খবরাদি, ভবিষ্যৎ ও অতীতের গায়েবি বিষয়- সম্পর্কিত খবর, পুনরুত্থান দিবস সংক্রান্ত খবর, ইমান ও ইয়াকিনের দলিল-প্রমাণাদি।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, আর্ন্তজাতিক, অর্থনৈতিক, সংস্কৃতিসহ বিজ্ঞানের সকল বিষয় সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। কিন্তু আফসোসের বিষয়, মুসলিম জাতি আজ এ চিরন্তন মু'জিযা আল-কুরআনকে পরিত্যাগ করার কারণে লাঞ্ছিত, অপমানিত ও তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে নিগৃহীত জীবনযাপন করছে। অথচ আল-কুরআনের প্রথম নির্দেশই হচ্ছে 'পড়ো তোমার প্রভুর নামে'। আল্লাহ তা'আলা কুরআনকে পড়তে, বুঝতে ও তা থেকে উপকার গ্রহণ করতে বলেছেন। তাই মানবজাতির হেদায়াত এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের দ্বার উন্মোচনের জন্য সকলকে কুরআন পড়তে হবে।

 

প্যানেল আলোচনা '

আল-কুরআন পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ' 

কুরআন-হাদিসের নির্দেশনা আমি/আমরা যেভাবে অনুশীলন করতে পারি' 

(উল্লিখিত শিরোনামগুলোর আলোকে তোমরা শিক্ষকের নির্দেশনা মোতাবেক প্যানেল আলোচনা

 

জ্ঞানের উৎস হিসেবে আল কুরআন

মহাগ্রন্থ আল কুরআন জ্ঞানের ভাণ্ডার। কুরআন যারা মানেন এবং যারা মানেন না, সকলে কুরআনের বিভিন্নমুখী হেদায়াত থেকেই আলো নিয়েছেন। আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের মূল উৎসই হলো আল-কুরআন। অন্য কোনো ধর্মগ্রন্থের এই বৈশিষ্ট্য নেই। এতে রয়েছে ভ্রূণতত্ত্ব বিদ্যা, শরীর তত্ত্ববিদ্যা, জীববিদ্যা, প্রাণিবিজ্ঞান, উদ্ভিদবিজ্ঞান, সমুদ্রবিজ্ঞান, ভূতত্ত্ববিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, ভাষাবিজ্ঞান, সমরবিজ্ঞান ও মহাকাশ বিজ্ঞান প্রভৃতি। আরো রয়েছে জীবনের বিভিন্ন শাখা ও প্রশাখাগত বিজ্ঞান। সে হিসাবে কুরআনের প্রতিটি আয়াতই বিজ্ঞান বহন করে। মহান আল্লাহ বলেন, 'বিজ্ঞানময় কুরআনের শপথ।' (সূরা ইয়াসিন, আয়াত: ২) যেহেতু কুরআন হলো সমস্ত জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎস, তাই এখানে বিজ্ঞানময় কুরআনের শপথ করে এর গুরুত্ব বুঝানো হয়েছে। কুরআন থেকে বিজ্ঞানের চর্চা করেই মুসলমানরা কয়েক শতাব্দীব্যাপী বিশ্বে বিজ্ঞানের অগ্রনায়ক ছিল। অতঃপর বাগদাদ ও স্পেনের রাজনৈতিক পতনের ফলে বিজ্ঞানেরও পতন ঘটে এবং তাদেরই রেখে যাওয়া বিজ্ঞান অনুসরণ করে বস্তুবাদী ইউরোপ আজ উন্নতির শিখরে আরোহণ করছে। শিক্ষার্থীরা এখানে আল কুরআন যে জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎস তার কয়েকটি নমুনা আলোচনা করা হবে।

ভ্রূণতত্ত্ববিদ্যা ভ্রূণতত্ত্বের মূলে আল্লাহ পাকের ওহি হলো, 'পাঠ করুন, আপনার পালনকর্তার নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে।' (সূরা আলাক্ব, আয়াত: ১-২) আরবি শব্দ 'আলাক' অর্থ জমাট রক্ত। অন্য অর্থ দৃঢ়ভাবে আটকে থাকে এমন আঠালো জিনিস। যেমন, জোঁক কামড় দিয়ে আটকে থাকে। এভাবেই ভ্রূণতত্ত্ব সম্পর্কে অজানা অনেক জ্ঞান কুরআন থেকে পাওয়া যায়।

মানুষের সৃষ্টি রহস্য

মানুষের সৃষ্টিতে আল্লাহ তা'আলার দেওয়া তত্ত্বের উল্লেখ করে কুরআনের সূরা তারিক এর ৫-৭ আয়াতে ঘোষণা করা হয়েছে, 'সুতরাং মানুষের ভেবে দেখা উচিত যে, কোন বস্তু থেকে সে সৃজিত হয়েছে। তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে সবেগে বের হয়ে আসা পানি থেকে। যা বের হয় মেরুদণ্ড ও বক্ষ পাঁজরের মাঝখান থেকে।'

সকল প্রাণীর সৃষ্টি রহস্য

এ বিষয়ে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, পানি থেকেই প্রাণিজগতের উদ্ভব। অথচ কুরআন এ কথা আগেই বলেছে,

وَجَعَلْنَا مِنَ الْمَاءِ كُلَّ شَيْءٍ حَيْ أَفَلَا يُؤْمِنُونَ 

অর্থ: আমরা প্রাণবান সবকিছু সৃষ্টি করেছি পানি থেকে। তবুও কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না? (সূরা আম্বিয়া, আয়াত: ৩০)।

বিজ্ঞানের উৎস অনুমিতি

বিজ্ঞানের উৎস অনুমিতি যা যেকোনো সময় ভুল প্রমাণিত হতে পারে। যেমন বিজ্ঞানীরা বলেন, Science gives us but a partial knowledge of reality 'বিজ্ঞান আমাদেরকে কেবল আংশিক সত্যের সন্ধান দেয়'। তারা শুধু অনুমানের ভিত্তিতে কাজ শুরু করে থাকেন। তাঁরা বলেন, 'আমরা কতিপয় বাহ্য প্রকাশকে দেখি মাত্র, মূল বস্তুকে দেখি না'। যেমন ধোঁয়া দেখে মানুষ আগুনের সন্ধানে ছুটে থাকে। কিন্তু আল্লাহর ওহি হিসেবে কুরআন বিজ্ঞানের উৎস। যেখানে ভুলের কোনো অবকাশ নেই। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, 

لَّا يَأْتِيْهِ الْبَاطِلُ مِنْ بَيْنِ يَدَيْهِ وَلَا مِنْ خَلْفِهِ تَنْزِيلٌ مِّنْ حَكِيمٍ حَمِيدٍ .

অর্থ: সম্মুখ থেকে বা পিছন থেকে এর মধ্যে মিথ্যার কোনো প্রবেশাধিকার নেই। এটি ক্রমান্বয়ে অবতীর্ণ হয়েছে প্রজ্ঞাময় ও প্রশংসিত সত্তার পক্ষ হতে। (সূরা হা-মীম-আস্-সাজদা, আয়াত: ৪১-৪২)

জগত সৃষ্টির রহস্য

বিশ্বজগৎ সৃষ্টি সম্পর্কে বিজ্ঞান বলে, 'কোটি কোটি বছর পূর্বে বিশ্বজগৎ একটি অখণ্ড জড়বস্তুরূপে বিদ্যমান ছিল। পরে তার কেন্দ্রে একটি মহাবিস্ফোরণ ঘটে, যাকে Big-Bang বলা হয়। সেই মহা বিস্ফোরণের ফলে আমাদের সৌরজগৎ, ছায়াপথ, তারকারাজি ইত্যাদি সৃষ্টি হয়। অথচ কুরআন বহু পূর্বেই এ তথ্য প্রদান করেছে। আল্লাহ তা'আলা বলেন,

أَوَلَمْ يَرَ الَّذِيْنَ كَفَرُوا أَنَّ السَّمَوتِ وَالْأَرْضَ كَانَتَا رَتْقًا فَفَتَقْنَهُمَا

অর্থ: অবিশ্বাসীরা কি দেখে না যে, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী পরস্পরে মিলিত ছিল। অতঃপর আমরা উভয়কে পৃথক করে দিলাম। (সূরা আম্বিয়া, আয়াত: ৩০)

জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টির রহস্য

বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রতিটি প্রাণসত্তার মধ্যে রয়েছে বিপরীতধর্মী দুটি শক্তির জোড়। যার একটি পজিটিভ বা প্রোটন এবং অপরটি নেগেটিভ বা ইলেকট্রন। এমনকি বিদ্যুতের মতো প্রাণহীন বস্তুর মধ্যেও রয়েছে এই জোড়ার সম্পর্ক। অথচ কুরআন বহু পূর্বেই এ তথ্য দিয়ে বলেছে, 'মহাপবিত্র সেই সত্তা, যিনি ভূ-উৎপন্ন সকল বস্তু এবং মানুষ ও তাদের অজানা সবকিছুকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছে' (সূরা ইয়াসিন, আয়াত: ৩৬)।

উদ্ভিদের প্রাণ থাকা

উদ্ভিদের জীবন আছে, একথা বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু (১৮৫৮-১৯৩৭ খ্রি.) মাত্র কিছুদিন পূর্বে আবিষ্কার করলেন। অথচ এর বহু পূর্বেই একথা কুরআন বলে দিয়েছে। আল্লাহ তা'আলা বলেন, 'নক্ষত্ররাজি ও উদ্ভিদরাজি আল্লাহকে সিজদাহ করে' (সূরা আর-রহমান, আয়াত: ৬)। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সম্মানে পাথর ও বৃক্ষসমূহ ঝুঁকে পড়ে তাঁকে সম্মান জানিয়েছে এবং তাঁকে সালাম দিয়েছে। এ সবই উদ্ভিদের যে প্রাণ আছে, তার প্রমাণ বহন করে।

নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলে প্রাণের অস্তিত্ব

কুরআন এমন বিস্ময়কার তথ্য প্রকাশ করেছে, যা বিজ্ঞানীরা আজও প্রমাণ করতে পারেনি। আর তা হলো, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর প্রাণ আছে এবং আছে বোধশক্তি। এমনকি এরা সর্বদা আল্লাহর গুণগান করে। যেমন আল্লাহ বলেন, 'অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোনিবেশ করেন, যা ছিল ধূম্রবিশেষ। অনন্তর তিনি আকাশ ও পৃথিবীকে বললেন, তোমরা উভয়ে এসো ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়। তারা বলল, আমরা এলাম অনুগত হয়ে। (সূরা হা-মীম সাজদাহ, আয়াত: ১১)

আধুনিক বিজ্ঞানের তত্ত্বের সঙ্গে কুরআনের কোনো বিরোধ নেই, বিজ্ঞানের আবিষ্কারে যত উৎকর্ষ সাধিত হবে কুরআন যে বিজ্ঞানের উৎস তা দ্রুত বাস্তব উপলব্ধিতে আসবে। নতুন প্রজন্মকে যথাযথ উৎসাহ, সাহস এবং প্রযুক্তির সঠিক জ্ঞান দিলে তাঁরাই জাবির ইবনে হাইয়ান, ইবনে সিনা, মূসা আল খাওয়ারিজমি, আল- রাজির মতো বিশ্ববরেণ্য ইসলামিক ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠবে। আল্লাহ তা'আলা আমাদের মুসলিম উম্মাহর কল্যাণে জ্ঞানচর্চায় অবদান রাখার সৌভাগ্য দান করুন।

 

একক কাজ 

জ্ঞানের উৎস হিসেবে আল-কুরআনের সপক্ষে যুক্তি বা বাণী (আয়াত) উল্লেখপূর্বক ভিপ কার্ড বা পোস্টার তৈরি করো।

 

 

Content added By
Promotion